মুনাজাতমূলক আয়াত (পাঠ ১১)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | - | NCTB BOOK
48
48

আল্লাহ তায়ালা আমাদের রব। তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা ও রক্ষক। তিনি অমুখাপেক্ষী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি আমাদের আলো, বাতাস, পানি, খাদ্য ইত্যাদি দান করেন। পৃথিবীর সকল নিয়ামত তারই দান। তিনি আমাদের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন। তার দয়া ও করুণাতেই আমরা দুঃখ-কষ্ট থেকে রক্ষা পাই। এককথায় সকল কিছু তারই অধীন। তার হুকুমেই সবকিছু পরিচালিত হয়। পার্থিব জীবনে আমাদের যা কিছু প্রয়োজন, তাও তিনি দান করেন।

সুতরাং আমাদের উচিত তারই কাছে সবকিছুর জন্য প্রার্থনা করা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজন সম্বন্ধে প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হন।' (জামি তিরমিযি)। আল্লাহ তায়ালার নিকট কিছু চাওয়ার মাধ্যম হলো মুনাজাত করা। মুনাজাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের চাহিদা জানাতে পারি। আল-কুরআনে মুনাজাতমূলক বহু আয়াত রয়েছে। এ পাঠে আমরা এরূপ তিনটি মুনাজাতমূলক আয়াত শিখব। অতঃপর এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নিকট মুনাজাত করব।

আয়াত ১

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرُ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَسِرِينَ

অর্থ: "হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করছি। তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর এবং আমাদের প্রতি দয়া না কর তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।" (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত ২৩)

সর্বপ্রথম এ মুনাজাত হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.) করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করে জান্নাতে বসবাস করতে নির্দেশ দেন। জান্নাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে সকল নিয়ামত ভোগ করার অনুমতি দেন। শুধু একটি নির্দিষ্ট গাছের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করেন। কিন্তু আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) শয়তানের প্ররোচনায় ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেলেন। তাঁদের এ কাজের জন্য মহান আল্লাহ বেহেশত থেকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেন। দুনিয়ায় এসে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) তাঁদের ভুল বুঝতে পারেন। তাঁরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে কান্নাকাটি করতে থাকেন। পরিশেষে আল্লাহ তায়ালা দয়াপরবশ হয়ে তাঁদের উপর্যুক্ত মুনাজাত শিক্ষা দেন। অতঃপর হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) এ মুনাজাতের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ফলে আল্লাহ তায়ালা তাঁদের দোয়া কবুল করেন এবং ক্ষমা করে দেন।

এ আয়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুনাজাত। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আমরা নানারকম পাপ করে থাকি। আমরা আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করে থাকি। এমতাবস্থায় আমাদের উচিত অপরাধসমূহ স্বীকার করা। অতঃপর এ মুনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি দয়া করবেন এবং আমাদের পাপ মাফ করে দেবেন।

আয়াত ২

رَبَّنَا آتِنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا

অর্থ: "হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ থেকে আমাদের প্রতি দয়া কর এবং আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা করার ব্যবস্থা কর।" (সূরা আল-কাহফ, আয়াত ১০)

মুনাজাতটি আসহাবে কাহফের যুবকগণ করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা সূরা কাহফে তাঁদের ঘটনা ও মুনাজাত উল্লেখ করেছেন। আমাদের প্রিয় নবি (স.)-এর আগমনের কয়েকশ বছর পূর্বের ঘটনা। দাকইয়ানুস নামক এক অত্যাচারী বাদশাহ ছিল। সে ইমানদারদের উপর খুব অত্যাচার করত। তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কয়েকজন যুবক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেন। তাঁদের সাথে একটি কুকুরও ছিল। তাঁদেরকে আসহাবে কাহফ বলা হয়। তাঁরা গুহাতে আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মশগুল থাকতেন। গুহায় থাকাবস্থায় তাঁরা আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করে এ মুনাজাত করেন। আল্লাহ তায়ালাও তাঁদের দোয়া কবুল করেন।
নেককার ও পুণ্যবানগণ কখনোই আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ত্যাগ করেন না। শত অত্যাচারেও তাঁরা যথাযথভাবে মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন। এজন্য প্রয়োজনে নিজেদের ঘরবাড়ি, দেশত্যাগ করতেও পিছপা হন না। আমরাও তাঁদের মতো আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করব। কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ছাড়ব না। বরং কোনো অসুবিধা দেখা দিলে আল্লাহ তায়ালার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করব। ফলে তিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন এবং আমাদের সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবেন।

আয়াত ৩

رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

অর্থ: "হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমারই উপর নির্ভর করেছি, তোমারই অভিমুখী হয়েছি এবং প্রত্যাবর্তন তো তোমারই নিকট।" (সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত ৪)

এ মুনাজাত করেছিলেন হযরত ইবরাহিম (আ.)। কাফিরদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য তিনি আল্লাহ তায়ালার নিকট এ মুনাজাত করেন।

বস্তুত, আল্লাহ তায়ালা সকল কিছুর মালিক। তার দয়া ও অনুগ্রহ ব্যতীত আমরা কোনো কিছু করতে পারব না। সুতরাং সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সকল অবস্থায় আমরা আল্লাহ তায়ালার দয়ার উপর নির্ভর করব। সকল কাজে তাঁরই অভিমুখী হবো। তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাহায্য করবেন। উক্ত মুনাজাত আমাদের এ শিক্ষা প্রদান করে।

দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা মুনাজাতমূলক আয়াত তিনটি অর্থসহ একে অন্যকে মুখস্থ বলবে।
বাড়ির কাজ: শিক্ষার্থীরা মুনাজাতমূলক আয়াত তিনটি পড়ার টেবিলের সামনে ঝুলিয়ে রাখার জন্য সুন্দর করে লিখে একটি পোস্টার তৈরি করবে।
Content added By
Promotion